ভাবি যখন বউ গল্প পর্ব ৫

ভাবি যখন বউ গল্প পর্ব ৫

Table of Contents

ভাবি যখন বউ

 

এদিকে অবশ্য মিরার খুব ইচ্ছে করছিলো কাব্যকে একবার জিজ্ঞাসা করতে যে কাব্য এখন কোথায় যাচ্ছে ? যেখানে যাচ্ছে মিরাকেও যেন সাথে নিয়ে যায়। আসলে মিরার কয়েক মাস ধরে কোথাও যায়নি। তাই এমন মনে হচ্ছে মিরার। কিন্তু, মিরা বলতে পারলো না।

 

https://www.alokitobd.com/2021/11/vabijokhonbow5.html

ভাবি যখন বউ

 

কাব্য : আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম, বেরিয়ে নিলাকে ফোন কল করলাম। ৩ বার রিং হওয়ার পর  নিলা রিসিভ করলো।

কাব্য : হ্যালো নিলা কোথায় তুমি ?

নিলা : কেনো ? কোথায় আবার। আমি বাসায় থাকি, তাই বাসায়ই আছি।

কাব্য : আরে তুমি এতো কড়া জবাব দিচ্ছ কেনো ? একটু দেখা করতে পারবে কি ?

নিলা : না, আমার এত সময় নেই দেখা করার জন্য।

কাব্য : সত্যি নেই ?

নিলা : আমার আর সময় ! আমার সময় সব সময়ই থাকে। মনে হয় তোমার সময়ই নেই। নতুন বর তুমি । হয়তো অনেক কাজে ব্যস্ত আছো।

কাব্য : আরে এরকম ভাবে কথা বলছো কেনো নিলা ? একবার দেখা করো দয়া করে ।

নিলা : কোথায়?

কাব্য : পার্কে আসতে পারবে এখন ।

নিলা : পার্কে কেনো ? আমরা কি ওখানে প্রেম করতে যাচ্ছি নাকি ? (রাগী কন্ঠে বললো নিলা)

কাব্য : প্লিজ, সহজ করে কথা বলো। আচ্ছা নিলা তুমিই বলো কোথায় আসবো ?

নিলা : তুমি যেখানে বলেছো সেখানেই থাকো, আমিই আসতেছি।

কাব্য : ঠিক আছে, আসো।

 

তারপর আর কথা না বলে ফোন কেটে দিলো।

নিলা মেয়েটার এতো রাগ আসে কোথা থেকে, বাবা ! আমি যথা সময়ে পার্কে গিয়ে উপস্থিত হলাম। আমি সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর নিলা আসলো।

 

কাব্য : কি করছো ? ভালো আছো ?

নিলা : তোমার মতো ওতোটা ভালো নেই।

কাব্য : মেজাজ খারাপ করো না প্লিজ।

 

নিলা : এখন তো তোমার মেজাজ খারাপ হবেই । তোমার তো এখন বউ আছে। তাহলে আমাকে দিয়ে কি করবে এখন তুমি ? আমি তো খেলনা এখন ।

কাব্য : নিলা! তুমি বুঝতেছো না কেনো ? আমি সত্যিই এই বিয়েতে কোনো ভাবেই রাজি ছিলাম না। আমি একমাত্র তোমাকেই ভালোবাসতাম আর এখনও ভালোবাসি।

নিলা : হা হা হা… ভালোবাসো আমাকে ?

কাব্য : কেনো ? কোনো সন্দেহ ?

কাব্য : যদি বলি তুমি এখনই আমাকে বিয়ে করো তাহলে কি পারবে বিয়ে করতে ?

কাব্য মনে মনে : “আমি অবাক হয়ে তাকালাম নিলার দিকে। নিলার মাথায় কি কোনো গন্ডগোল হয়েছে ?কি জানি, কে জানে ?”

কাব্য : কি বলছো তুমি এসব নিলা ? এখন…

নিলা : জানতাম তুমি পারবে না। যখন তুমি মিরা’কে ডিভোর্স দিয়ে দেখাতে পারবে আর আমাকে বিয়ে করবে তখনই আমি বিশ্বাস করবো যে তুমি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো, এর আগে না।

এ কথা বলেই নিলা চলে গেলো। কাব্য অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রইলো নিলার চলে যাওয়ার দিকে।

 

কাব্য ভাবছে : “আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম কি করতে পারি এখন ? আমিতো সত্যিই নিলাকে ভালোবাসি। কিন্তু, নিলা আমাকে এখন যে পরিস্থিতিতে ফেললো ! এখন কি করতে পারি আমি ? নিলাকে আমি ভালোবেসেছি যেহেতু সেহেতু নিলাকে বিয়েও করতে হবে আমার । কিন্তু, এদিকে মিরা কি হবে ?আমার যতটুকু মনে হচ্ছে, মিরাকে আমি একটু হলেও স্বভাবিক করতে পেরেছি। কিন্তু, এখনি যদি আবার এমন কিছু করি তাহলে তো মিরা আবার ভেঙে পড়বে। যদিও মিরা আমার জন্য দুঃখ করবে না। তবুও আমিতো মিরার বন্ধু।

 

কিন্তু আমি কি নিলাকে কি হারিয়ে ফেলবো ? নাহ্ !এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমি নিলাকে অনেক ভালোবাসি। তাই নিলার দেয়া শর্ত মেনে নিতে আমি রাজি।

 

সেখান থেকে বাসায় ফিরলাম। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। নিলা এমন করতে পারলো আমার সাথে ? কি করে আমি বের হবো এই গোলক ধাঁধাঁ থেকে ? একদিকে মিরা এখন আমার বিয়ে করা স্ত্রী। অপরদিকে প্রেমিকা নিলা আমার ভালোবসা।

মিরাকে এখন ডিভোর্স দিলে আম্মু আর মিরা দুজন অনেক কষ্ট পাবে। আর আমার আম্মুর সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই করতে পারবো না আমি। আর নিলাকে ছাড়াতো আমি অসম্পুর্ণ ।

 

আমি বাসায় ফিরে সোজা আমার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখলাম মিরা রুমে নেই। আবার কোথায় গেলো মেয়েটা ? বলে গিয়েছিলাম বিশ্রাম করতে আর সে কোথায় গেছে কে জানে। কোথায় যে গেলো মিরা । মিরালে না পেয়ে আমি আমি আম্মুর রুমের দিকে গেলাম।

 

মা : কিরে এসে গেছিস ?

কাব্য : হ্যা, মিরা কোথায় গেছে ?

মা : কোথায় আবার, রুমেই আছে হয়তো দেখ গিয়ে।

কাব্য : পেলাম না তো।

মা : ভালো করে খুঁজে দেখ। রুমেই হয়তো কোথাও আছে আমার মনে হয়।

কাব্য : ঠিক আছে।

 

আম্মুর কথা মত আবার রুমে এসে চারিদিক ভালো করে খুঁজে দেখলাম, কিন্তু তবুও কোথাও পেলাম না। ঠিক তখনই আমি বারান্ধায় কারো উপস্থিতি টের পেলাম । মনে হয় কেউ একজন বারান্ধায় আছে। বারান্ধায় গিয়ে দেখলাম মিরা একা একা বারান্ধার গ্রীলে হাত রেখে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিরা বাহিরের দৃশ্য দেখছে বোধ হয়। আমি মিরাকে বলে গেলাম শুয়ে বিশ্রাম নিতে আর সে বারান্ধায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে।

আর দেখবেই তো , অনেক দিন হলো বাহিরটা দেখেনি মিরা। ওর আব্বু-আম্মু তো ওদের বাসায় নিতে চেয়েছিলো কিন্তু মিরা যায়নি।

“কাব্য আর আমার বিয়ের দিন আম্মু ভিজা ভিজা চোখে তাকাচ্ছিলো। তারপর আর আসেনি আম্মু । বোধ হয় মেয়ের এই কষ্ট দেখতে পারবে না আম্মু, তাই বলে আর আসছে না। আর কাব্য সেই কখন গেলো কিন্তু এখনো এলো না। কাব্য পাশে থাকলে আমার ভালোই লাগে। একাকিত্ব গুছিয়ে উঠতে পারি সেই সময়টা। কতো সুন্দর সুন্দর কথা বলে কাব্য । আর আমার কতো কেয়ার করে ছেলেটা । কাব্য কি নিলারও এমন কেয়ার নেয় !

 

কাব্য মনে মনে : এদিকে আমি অনেক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে আছি। মিরা মেয়েটা এখনও টেরই পায়নি। কি এতো ভাবে মিরা ?

কাব্য : মিরা কি ভাবছো ?

আমার কথা শুনেই মিরা চমকে পিছনে ফিরে তাকালো। অবাক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

মিরা খুব বড়সড় শক খেলো দেখে মনে হলো। কাব্য বুঝলো কিভাবে যে আমি মনে মনে কি ভাবছি।

 

কাব্য : হ্যাঁ নেই। তুমি এই জগতে নেই। তুমি এখন ভাবনার জগতে আছো। কি এতো ভাবছো তুমি ? আমি যে কতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি তোমার সেদিকে তো তোমার খেয়ালই নেই।

 

মিরা আমার কথা শুনে বিষ্ময় কাটিয়ে উঠলো। তারপর বললো…

মিরা : ওও

তখন আমার কথা শুনে যেন মিরা স্বস্তি পেলো।

কাব্য : তোমাকে না আমি বলেছিলাম বিশ্রাম নিতে। তাহলে এখানে কি করছো তুমি ? প্রকৃতি প্রেমী হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি তোমার ?

মিরা : না, আসলে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছিলো না। তাই এখানে দাঁড়িয়ে থেকে বাহিরের দৃশ্য দেখছিলাম।

কাব্য : ও আচ্ছা, তুমি তো অনেক দিন হলো কোথাক ঘুরতে যাও না।

মিরা তখন মাথা নাড়ালো…

কাব্য : তাহলে আজ যাবে ?

মিরা : কোথায় ?

কাব্য : ঘুরতে…

মিরা তখন আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।

কাব্য : কি হলো ? যাবে মানে যাবে। মানা করার কোনো সুযোগ নেই।

মিরা : কিন্তু…

কাব্য : কোন কিন্তু না। আজ সন্ধ্যায় আমরা ঘুরতে যাচ্ছি এটাই ফাইনাল। ঠিক আছে…

মিরা : না মানে…

 

কাব্য : আমি বললাম তো আর কোনো কথা নেই। আমার সিদ্ধান্তই ফাইনাল।

মিরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

 

কাব্য : দুপুর হয়ে গেছে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে হবে, চল।

মিরা : একটু আগেই না খেলাম সকালের নাস্তা।

কাব্য : তো কি হয়েছে ?

মিরা : এখন আবার খাবো কি করে ?

কাব্য : কেনো হা করে খাবে। ( মিরা হেসে দিলো )

কাব্য : তারপর, আজ সন্ধ্যায় যাচ্ছো তো?

 

মিরা : মানা করতে বারণ করলে তো। তাহলে তো কোনো উপায় নেই,যেতেই হবে।

কাব্য : হুম, এইতো ভালো মেয়ে।

তারপর আমি নিচে চলে গেলাম। আম্মু আর রহিমা খালা তখন খাবার রেডি করছিলো। আব্বুও অফিস থেকে বাসায় এসেছে দুপুরের খাবারের জন্য। আমি নিচে যেতেই,

বাবা : কিরে বৌমা কোথায়?

কাব্য : উপরে আসছে।

বাবা : ও, তা মিরাকে একটু বাইরে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়, তাহলে ওর  মন ভালো হবে।

 

কাব্য : হ্যাঁ, আব্বু আজ সন্ধ্যায় ঘুরতে যাবো ভাবছিলাম।

বাবা : ও খুব ভালো কথা। গাড়ি নিয়ে সারা শহর ঘুরিয়ে আসিস বৌ’মাকে নিয়ে কেমন।

কাব্য : হ্যা ঠিক আছে।

এদিকে মিরা রুমের ভিতরেই আছে। ভাবুক হয়ে বসে আছে। কাব্য ততক্ষণে বুঝে নিলো যে, মিরা ঘুরতে যেতে চায়।

মিরা ভাবছে, “কি করে ? আশ্চর্য। কিন্তু, আমার যাওয়াটা কি ঠিক হবে এখন ? আর যদি না যাই তাহলে তো কাব্য রাগ করবে। কি যে করি ? যেতেই তো হবে।

ভাবি যখন বউ পর্ব – ৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *