ভাবি যখন বউ
গল্পের ২য় পর্বের পর
কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর…
নিলা : কি আর বলবে তুমি ? বাসর রাতের গল্প শুনাবে তাই না ? ( স্পষ্ট কান্নার শব্দ ভেসে আসছে )
আমি : প্লিজ কেঁদো না। আমার কথাটা শুনো প্লিজ একবার ।
কিন্তু ওপাশে নীলা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে শুধু।
আমি : দেখো লক্ষিটি কেঁদো না দয়া করে ।
নিলা : চুপ! একদম আমাকে ইম্প্রেস করার চেষ্টা করবে না তুমি ।
আমি : আচ্ছা, অন্তত-পক্ষে তোমার কান্না'টা থামিয়ে আমার কথাটা শুনো।
তারপর নিলা কান্না থামালো। তবুও ফুফানো শোনা যাচ্ছে…
আমি : নীলা, বিশ্বাস করো আমি এই বিয়েটা আমার নিজের ইচ্ছেতে করিনি।
নিলা : ও তাই ? ভালো কথা তারপর ?
আমি : বিশ্বাস করো আমি আম্মুর কথাতে এই বিয়েতে রাজি হয়েছি।
ভাবি যখন বউ পর্ব ৩ |
নিলা : বাহ্, বেশ তো ! বিয়ে করে ফেলেছে অথচ বিয়েতে তোমার মত ছিলো না ? গল্প'টা বেশ মানিয়েছে ! আগে তো তুমি বোকা-সোকা ছিলে, এখন দেখছি বেশ চালাক হয়ে গেছো কাব্য ?
আমি : বিশ্বাস করো। আমি শুধু মাত্র আম্মুর কথা রাখার জন্যই এই বিয়েটা করেছি। কাকে করেছি তুমি কি জানো ?
নিলা : কাকে আবার মিরা নামের একটা মেয়েকে বিয়ে করেছো।
আমি : মিরা কে জানো ?
নিলা : কে আবার তোমার সাথে যার বিয়ে হয়েছে সেই মিরা । ( কাঁদতে কাঁদতে বললো নিলা )
আমি : আরে চুপ করো একদম। ( ধমক দিয়ে বললাম )
নিলা কোনো কথাই বললো না। তবে কান্নার আরও বাড়তেই থাকলো…
আমি : মিরা আমার ভাবি। আমার বিয়েটা আমার আপন ভাবির সাথেই হয়েছে।
নিলা : মাম, মা মানে ম
আমি : মানে, আমার ভাবি প্রেগন্যান্ট। আর আমার ভাইয়া আজ ৪/৫ মাস থেকে নিখোঁজ আছে। এই সময় ভাবী'কে সাপোর্ট দেয়াটা খুব জরুরি। আর ভাইয়ার নিখোঁজ হওয়ায় আমার ভাবি একে'বারেই ভেঙে পড়েছিলো। তাই আম্মু আমাকে এই বিয়ের কথা বললে আমি আর মানা করতে পারিনি। মানা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার আম্মু কোনো কথা বলতে নিষেধ করেছিলো ।
নিলা : মিরার সাপোর্টের জন্য তোমার আম্মু তোমাকেই বেছে নিলো ? আর কাউকে পেলো না ?আর তুমিও তোমার আম্মর কথায় থৈ'থৈ করে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলে ?
আমি : নিলা,বোঝার চেষ্ঠা করো একবার। আমি সত্যিই আম্মুর চাপে বিয়েটা করেছি।
নিলা : সেটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু, কাল রাতে যে, তোমাদের বাসর রাত ছিল। ( বলেই আবার কাঁদতেই থাকলো নিলা )
আমি : আরে চুপ করো তুমি কিসের বাসর রাত হ্যাঁ ? ( বিরক্ত হয়ে বললাম )
নিলা : তার মানে তোমাদের মাঝে কিছুই হয়নি?
আমি : না। কিছুই হয়নি।
নিলা য: আমি বিশ্বাস করি না তোমার কথা। তোমরা ছেলে'দের সামনে বিয়ে করা বউ থাকতে তোমরা কিছুই করবে না, এটা অসম্ভব !
আমি : আচ্ছা, আমার কথা তোমার যদি বিশ্বাস নাই হয় তাহলে তুমি মিরার সাথে দেখা করতে পারো আজই ।
নিলা : না মানে।
আমি : আগামীকাল কি তোমার সময় হবে ? যদি সময় হয় তাহলে কফি শপে এসো তুমি। তোমার সাথে মিরার দেখা করিয়ে দিবো। তখনই বুঝতে পারবে সব ।
নিলা : হুম।
আমি : আচ্ছা, এখন রাখি।
নিলা : ঠিক আছে।
তারপর ফোন কেটে দিলাম আমি। যাক একটু শান্তি পাচ্ছি এখন । নিলার সাথে কথা বলতে পারলাম অবশেষে। ঘরে ডুকেই দেখলাম মিরা দাঁড়িয়ে আছে আর মিরার সাথে কয়েকজন প্রতি-বেশী আন্টিরা বসে আছেন। এরা এখানে কেনো বা কি মতলবে এসেছে কে জানে ? তখন শুনলাম তারা বলছিলো…
"তোমার কপাল ভালো যে এক ভাই'কে খাওয়ার পর তার ছোট ভাইকে স্বামী হিসেবে পেয়েছো। ( একজন আন্টি )
"হুম আর বলনা, এমন অলুক্ষুণে মেয়ে আমি আমার জীবনে আর দেখিনি। নিজের স্বামীর মৃত্যু ডেকে আনলো মেয়েটা। আর এখন আবার তারই ভাই এর বউ হয়ে আছে। ( অন্য একজন আন্টি )
তাদের এসব কথা শুনে রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে আমার। এদের এগুলো ছাড়া আর কোনো কাম-কাজ নেই নাকি। আমার ভাইয়া নিখোঁজ এতে মিরার দোষ কোথায় ? আর মিরা তো নিজের ইচ্ছায় এই বিয়ে করতে চায়নি। আম্মুই ওকে প্রতিজ্ঞা করিয়ে বিয়েতে রাজি করিয়েছে।
"হুম, এসকল মেয়েগুলোর এই একটাই কাজ। এক ভাইকে শুষে নিয়েছে, এখন আরেক ভাইয়ের ঘাড়ে চেপে বসেছে। ( অন্য এক আন্টি )
তখন আমি একবার মিরার দিকে তাকালাম। দেখলাম মেয়েটা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুধু। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে মিরার। পাশে আম্মুও নেই এখন। আমি তখন এগিয়ে গেলাম আর বললাম…
"কি সমস্যা কি আপনাদের হ্যা ? (রাগী কন্ঠে বললাম)
"আমাদের আবার কি সমস্যা হবে বাবা ? এই তো তোমাদের বাড়ির নতুন বউ দেখতে এলাম। (একদম খোঁচা মেরে বললেন এক আন্টি )
আমি : "একটু আগে আপনারা কি যেন বলছিলেন ?এক ভাইকে শুষে নিয়েছে এখন আরেক ভাই এর ঘাড়ে চেপে বসেছে। শুনি কে কাকে শুষে নিয়েছে হ্যা ? ভাইয়া নিখোঁজ ৪/৫ মাস থেকে এতে মিরার কি দোষ ? আর মিরা অলুক্ষুনে মেয়ে হল কিভাবে ? ওর কারনে কি ভাইয়া নিখোঁজ হয়েছে নাকি ? ভাইয়া নিখোঁজ হওয়াতে মিরার দোষ কোথায় খু্জে পেলেন আপনারা ?
( আমি এতক্ষণ চিৎকার করে বলছিলাম কথাগুলো, আমার চিৎকারে সবাই এসে উপস্থিত হল সেখানে )
"এরকম মেয়ে'কে তো অপয়াই বলা সঠিক। স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার ৪/৫ মাস হতে না হতেই অন্য আরেক জনকে বিয়ে করে নিলো ? কি খারাপ স্বভাবের মেয়ে ?
আমি : চুপ করুন ! আর একটা খারাপ শব্দও বলবেন না মিরাকে নিয়ে। এই বিয়েটা মিরার ইচ্ছায় হয়নি। আমার আম্মুর ইচ্ছায় এই বিয়ে হয়েছে। আমার আম্মু মিরালে প্রতিজ্ঞা করিয়ে বিয়েতে রাজি করিয়েছেন। আরভনা হয় মিরা এই বিয়েতে কখনও রাজিই হত না। এমন একটা মেয়েকে আপনারা অপয়া বলছেন যে, স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে দিনে ২/৩ বার জ্ঞানও হারিয়েছে। আপনারা এমন একটা মেয়েকে অলুক্ষুনে বলছেন যে তার গর্ভে সন্তান থাকা সত্ত্বেও নিজের পরোয়া না করে স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার শোকে নিজেকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। বলি কেমন মহিলা আপনারা ? মিরার মতো পরিস্থিতি যদি আপনার মেয়ের হতো তাহলে এরকম বলতে পারতেন ?
হুহ! আমাদের মেয়ে এরকম হতেই পারে না। (একজন আন্টি)
আমি : হতে পারে না ? তাহলে আপনার মেয়ের বিয়ের ২ মাস পরেই ডিভোর্স হয়ে এখনও ঘরে বসে আছে কেনো ? এই আপনার মেয়ের ভালোর নমুনা ?
সবাই তখন একদম চুপ। মিরা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুধু । আমি মিরার হাত ধরে উপরের দিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম…
আমি : চলো মিরা।
তারপর কয়েক সিঁড়ি উঠেই আমি আমার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি : "আম্মু উনাদের যেন, আর বাড়ির আশে-পাশেও কখনও না দেখি।
এই কথা বলেই রুমের দিকে আমি পা বাড়ালাম। যাওয়ার সময়ে আমি আম্মুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আম্মুর চোখের পানি চিক চিক করছে। এটাই হয়তো আম্মুর আনন্দ অশ্রু।
মিরাকে নিয়েই আমি রুমে আসলাম। রাগ এখনো আমার মাথায় চড়ে আছে অনেক । মিরা আস্তে আস্তে আমার কাছে এলো, আর বললো…
মিরা : "তুমি খামোখা আন্টিদের সাথে ঝগড়া করলে কেনো ? ওরা তো ঠিকই বলছিলেন তাইনা ? (মিরা)
আমি "চুপ, একদম চুপ! কি ঠিক বলছিলো ওরা হ্যাঁ ?( অনেকটা রেগে গিয়ে বললাম )
মিরা : "এই যে আমি একটা অলুক্ষুনে, অপয়া। (মিরা মাথা নিচু করে বললো)
আমি : "একদম চুপ! এরকম কথা আর কখনও যেন তোমার মুখে না শুনি। কে বলেছে যে তুমি ওরকম ? যত্তসব আজগুবি কথাতে বিশ্বাস করো তোমরা সব মেয়েরা।
"তারপর মিরা কিছুক্ষণ আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বললো…
মিরা : তুমি আসলেই অনেক ভালো কাব্য।
আমি : হুম, জানি আমি।
মিরা : সকালের নাস্তাও তো করোনি তুমি । তুমি এখানে বসো আমি এখনই নাস্তা নিয়ে আসছি।
আমি : এই একটুও নড়বে না। আজ থেকে তোমার সব কাজ করা বন্ধ।
মিরা : মানে! ( মিরা অবাক হয়ে বললো )
আমি : হ্যাঁ তুমি বসো এখানে। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
"মিরা একা একা বসে বসে ভাবতে লাগলো। কাব্য আসলেই খুব ভালো ছেলে । কাব্য খুব ভালোর থেকে আরো বেশী ভালো। বোঝাই যাচ্ছে যে, খুব কেয়ার নিবে মিরার। এই মুহুর্তে নিশান এর কথা খুব মনে পড়ছে মিরার । এখন যদি নিশান তার পাশে থাকতো তাহলে কতো কিছুই না করতো মিরার জন্য । আর মিরা মা হতে চলেছে শুনলে কতইনা খুশিতে আঠখানা হয়ে যেত নিশান। মিরার পেটে মাথা লাগিয়ে নিশান বাবুর সাথে কথা বলতো। আরও কতো কি পাগলামি করতো। যদিও মিরার পেটের বাবুটা এখনো অনেকটাই ছোট। যার শুধু মাত্র অস্বিত্বই আছে কেবল।
আমি : এদিকে আমি নিচে নেমে আসলাম। নাস্তা নিয়ে উপরে উঠে যেতেই আম্মু বললো,
মা : এমন ভাবেই মেয়েটার পাশে থাকিস তুই। হারিয়ে যেন না যায় মেয়েটা।
আমি : অপ্রস্তুত একটা হাসি দিলাম। তারপর রুমে এসে দেখি মিরা কি যেন একটা কিছু ভাবছে।
আমি : উফ তুমি আবার সেই চিন্তায় মগ্ন। তোমার না চিন্তা করা মানা ?
মিরা তখন আমতা-আমতা করে বললো,
মিরা : হ্যাঁ ! আসলে...
আমি : কোনো আসলে - টাসলে নাই, এখন খাওয়া শুরু করো তুমি।
আমি একথা বলেই মিরার মুখের দিকে এগিয়ে দিলাম খাবার। মিরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে…
আমি : কি হলো নাও ?
"মিরা তখন কোনো কিছু না বলেই খাবারটা মুখে নিলো। তারপর আমি মিরাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম। আর আমি নিজেও খেতে লাগলাম। তখনই মিরাকে বললাম ,
আমি : নিলা তোমার সাথে দেখা করতে চায়। সকালে কথা হয়েছিলো আমার নিলার সাথে
"মিরা তখন খাচ্ছিলো আর হঠাৎ আমার এ কথা শুনে খাওয়া বন্ধ করে দিলো মিরা আর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
মিরা : ওও কখন ?
আমি : কাল, বিকেলের দিকে ।
মিরা : ওহ। ঠিক আছে।
নিলার কথাটা শুনেই মিরার বুকটা কেমন ২য় পর্ব শেষ
Post a Comment