ভাবি যখন বউ পর্ব ১

ভাবি যখন বউ পর্ব ১

ভাবি যখন বউ Bhabi Jokhon Bow

কখনো ভাবিনি আমার আপন ভাবিকে বিয়ে করতে হবে।

কিন্তু আমাকে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিয়ে করতে হয়েছে।  এখন আমি বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।

কিছুক্ষণ পর, আমার  রাত।  শুধু আমি নয়, আমি এবং আমার ভাবির।  (আমার ভাইয়ের স্ত্রীর নাম মিরা, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে এখন আমার স্ত্রী)

 

ভাবি যখন বউ পর্ব ১
ভাবি যখন বউ

 

এখন সে আর আমার ভাবী নয়, আমার স্ত্রী।

কিন্তু আমার চিন্তা নিলাকে নিয়ে।

নিলা আমার প্রেমিকার নাম।  প্রথম দেখাতেই যার প্রেমে পড়েছিলাম।  এবং সে তার জীবনের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতো আমাকে ।  নীলাকে এখন কি বলব ?  নিলা কি এটা মেনে নেবে?

 

খোকা তুই এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস ?  ‘ঘরে যা’ মায়ের গলার আওয়াজ শুনে আমি পিছনে ফিরে তাকালাম।

মা :  তুই কি হতাশ ?

আমি : না মা, এটা আমার দায়িত্ব।

হ্যাঁ!  যা ঘরে  যা (মা বলল)

 

আমি বাড়ির ছাদ থেকে নেমে এলাম।  আমি রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

কি করবো ভেবে পাচ্ছি না?  আমি দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলাম।

আমি রুমে ঢুকে দেখি জানালার পাশে মিরা বসে আছে এবং বাইরের দিক তাকিয়ে আছে। (মিরা আমার ভাবির নাম)

 

মিরার দৃষ্টি আকর্ষণ করার  জন্য আমি কাঁশি দিলাম। মিরা আমার দিকে তাকাল।

মিরার দৃষ্টি একদম শান্ত।

কিভাবে সম্ভব ? মেয়েটা নিজেকে থামিয়েও রাখতে পারে।

মিরা : কাব্য তুমি এসেছে ? ( আমার নাম কাব্য)

কোথায় ছিলে এতক্ষণ ? ( শান্ত কণ্ঠে বলল )

 

আমি : বাড়ির ছাদে ছিলাম। তুমি জানালায় দাঁড়িয়ে কি করছাে ? ঘুমাওনি এখনও ?

মিরা – নাহ, কি করে ঘুমাই বল ? ( গলায় যেন কথা আটকে )

– আমি কিছু বললাম না।

 

মিরা – আচ্ছা কাব্য ! আমার সাথেই এমন কেন হল ? কি দােষ করেছিলাম আমি ?

সাথে সাথেই ধুকরে কেঁদে উঠল মিরা

 

আমি : কেঁদাে না প্লিজ !

মিরা : আমি তােমার জীবনটাও নষ্ট করে দিলাম। মিরা : তুমি এখন নিলা’কে কি জবাব দিবে ?

 

( আমি আগে থেকেই নিলার বিষয়ে কথা শেয়ার করতাম মিরার কাছে )

 

আমি :  তোমার কোনাে দােষ নেই। তুমি নিজেকে দােষারােপ করাে না please !

মিরা কেঁদেই চলছে… ভাবি যখন বউ।

আমি : কাঁদবে না Please । যাও ঘুমিয়ে পড় ৷ অনেক রাত হয়েছে।

মিরা : ঠিক আছে । ভাঙ্গা গলায় বললো মিরা।

 

মিরা বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো।

আমি জানালার পাশে দাড়ালাম। মিরাকে তো খুব ভালাে ভাবেই শান্তনা দিলাম। এখন নিজেকে শান্ত করি কি করে ?

নিলা আমাকে প্রতারক  ভাববে না তো ? কি করবাে এখন আমি ?

কি করার আছে আমার ?

 

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে নিলার কথাই ভাবছিলাম।

নিলা কি আমাকে বিশ্বাস করবে ?  কি করতে

পারি আমি এখন ?

হঠাৎ আমার কাধে কারাে হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম মিরা।

 

মিরা : নিলার কথা ভাবছিলে ?

আমি মাথা নাড়ালাম ।

আমি : এখনাে ঘুমাওনি ?

মিরা : না, আমার ঘুম তো সেদিনই চলে গেছে৷ যেদিন থেকে তোমার বড় ভাই নিশান নিখোঁজ।আমার বড় ভাইয়ের নাম নিশান আহম্মেদ। আজ  থেকে ৪/৫ মাস আগে নিখোঁজ হয়েছে ভাইয়া। অনেক খোজ নেওয়ার পরেও পাওয়া যায়নি ভাইয়াকে । জানিনা কোথায় আছে বড় ভাইয়া ?

 

আমি কিছু বললাম না৷ জানালার দিক হয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

মিরা : আমাকে নিলার সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারবে।

আমি : কেনো ?

মিরা : ভয় পেয়াে না ৷ আমি কিছু করব না৷ নিলা কাছে সব বুঝিয়ে বলব। নিলা কি জানে?

আমি : জানি না৷ হয়তো সে জেনে গেছে ।

মিরা : চিন্তা করাে না তুমি, আমি বুঝিয়ে বলব৷ নিলা সাথে আমার দেখা করিয়ে দিয়ো৷

 

তারপর কিছুক্ষণ নিরব থাকলাম।

আমি : তুমি নিশান ভাই কে খুব ভালােবাসতে তাই না মিরা ?

মিরা শুধু আমার দিকে তাকালাে৷ চোখের পানি গুলাে শেষ হয়ে গেছে।

নিশান ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর মিরা একদম পাগল হয়ে যাচ্ছিল।

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে। প্রতিদিন রাতেই কাঁদতো । সকালে চোঁখ দেখলেই বুঝতে পারতাম।

 

মিরা : তােমার আর নিলার মাঝে আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়ালাম, তাই না ?

আমি : না, এটাতে তােমার কোনো দােষ নেই। ভাবি যখন বউ।

এই সময় তােমাকে সাপাের্ট দেওয়া খুবই জরুরী। আর এটা আমার দায়ীত্ব। ( মুখে  হাসি এনে বললাম )

 

মিরা : তুমি তো নীলাকে অনেক ভালোবাসো তাহলে আমায় বিয়ে করতে রাজি হলে কেনো ? 

আমি :  কিছু বললাম না।

মিরা : তুমি চুপ থাকলেও  আমার এটা অজানা নেই কাব্য !

আমি : তখন আমি  প্রশ্ন-সূচক দৃষ্টি’তে তাকালাম মিরার দিকে।

মিরা : আম্মুর কথায় তাইনা ?

 

আমি : হ্যা, এটা একটি কারণ অবশ্য। আম্মু মিরাকে তার নিজের মেয়ে হিসেবেই ভাবে। আর আমার ভাইয়ার তো কিছু হয়নি, নিঁখোজ আছেন ভাইয়া। তাহলে মিরাকে কেন তার আব্বুর বাসায় যেতে হবে ? তবে, নিশান ভাইয়াকেও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর তাই মিরাকে আমাদের এখানে রাখার জন্যই এটাই একমাত্র উপায় ছিলো আমার সাথে বিয়ে দিয়এং দেওয়া। আর এমন সময়ে মিরা মানে আমার ভাবীর সাপোর্ট প্রয়োজন।

 

মিরা : তা অবশ্য ঠিক।

আমি : হুমম, তবে…

মিরা : তবে কি?

(প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)

আমি : আরোও একটি কারন আছে ?

মিরা: আমি যেটা ভাবছিলাম সেটাই কি হতে পারে ?

আমি : তুমি কি ভাবছিলে ?

মিরা : আমার অনাগত সন্তানের জন্য ।

আমি :  মাথা নাড়ালাম শুধু । আর হ্যা হ্যা মিরা প্রেগন্যান্ট, ৪/৫ মাস  হয়েছে।

এরপর মিরা কিছুক্ষণ  সময় আমার দিকে তাকালো,তারপর…

মিরা : জানো, কাব্য তুমি সত্যি অনেক ভালো।

 

আমি : কি জানি ? হয়তো বা।

মিরা : আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার উপর অনেক বিরক্ত। কিন্তু, তুমি এখন দেখছি তুমি আমাকে খুব ভালো ভাবেই সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছো। আর আমি ভাবলাম তুমি হয়তো শুধু আম্মুর কথা রাখার জন্যই বিয়েটা করেছ, কিন্তু ! সত্যি তুমি খুবই ভালো।

আমি : আচ্ছা, তোমার এই সময়ে  বিশ্রামের প্রয়োজন ভাবী। ঘুমিয়ে পড়ো এখন যাও।

মিরা  বোকা ! সবার সামনেও কি ভাবী ভাবী করবে নাকি ? আম্মু শুনলে কষ্ট পাবে।

আমি : তাহলে ?

মিরা কিছুক্ষণ ভাবলো, আর তারপর বললো।

-নাম ধরে ডাকতে পারো।

 

আমি : নাম ধরে !

মির : হুমম। সমস্যা নেই তো ?

আমি : না, কিন্তু। ( আমি মাথা চুলকাতে লাগলাম…)

মিরা : আচ্ছা, তুমি যাই ডাকো সবার সামনে ভাবী ডেকো না শুধু ।

আমি: ঠিক আছে। যাও শুয়ে পড়ো এখন । শুভ রাত্রি !

শুভ রাত্রী !

তারপর আমি সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু, মিরা জানালার পাশেই দাঁড়িয়ে রইলো শুধু ।

 

আমি : কি হলো ঘুমাবে না ?

মিরা : ঘুম আসবে না।

আমি : কেনো ?

মিরা : প্রতিদিন রাতে নিশান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিতো। এখন তো নিশান নেই। তাই আর ঘুমও নেই।

 

আমি : কিন্তু, তোমার তো এখন ঘুমানো প্রয়োজন।

মিরা: কিন্তু, আমার তো ঘুম আসবে না।

আমি : এক কাজ করতে পারি

মিরা : কি ?

আমি : আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই আর তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।

 

‘হঠাৎ আমার এমন কথা শুনে মিরা আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকালো। হয়তো মিরা একটু হলেও ইতস্তবোধ করছে। আর নিজেকে মনে মনে অপরাধী মনে করছে’।

 

আমি : কি হলো ?

মিরা : না না, লাগবে না। আমি একাই ঘুমাতে পারবো।

আমি : কিভাবে ? ভাবি যখন বউ।

মিরা : চেষ্টা করলে এমনিতেই আমার ঘুম আসবে।

আমি তখনই সোফা থেকে উঠে গিয়ে মিরার কাছে গেলাম।

আমি : আমি জানি তোমার ঘুম আসবে না। চল, আমি তোমার মাথায় হাত বুলিতে দিচ্ছি।

তারপর আমি মিরার হাত ধরে টেনে বিছানায়…

ভাবি যখন বউ, ২য় পর্ব পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *